অরিজিনাল সফটওয়্যারের দাম অত্যাধিক চড়া হওয়ার কারণে অনেক সময় আমরা চাইলেও সেটা কিনতে পারি না। তাই আমরা খুঁজি কিভাবে ফ্রীতে সফটওয়্যারটি পাওয়া যাবে। অনলাইনে তখন আমরা ফ্রীতে সেই সফটওয়্যার পেয়েও যাই এবং কোনো কিছু না ভেবেই ইনস্টল করে ফেলি পাইরেটেড বা ক্র্যাক সফটওয়্যার এবং ফলস্বরূপ অনেক সময় ই বিভিন্ন রকম ভাইরাস এমনকি র্যানসমওয়্যারের কবলে পড়ি ও সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ডাটা হারিয়ে ফেলি।
তাই আজকে আমি প্রায় প্রতিদিন প্রয়োজন হয় এমন কিছু সফটওয়্যার নিয়ে কথা বলবো যা ফ্রি তেই পাওয়া যাবে। আর কথা না বাড়িয়ে চলেন মেইন পয়েন্টে চলে যাই।
নোটঃ
- আমি কোনো প্রকার শর্ট লিংক ব্যবহার করিনি। কারন এটা অনিরাপদ, যে কোণো শর্ট লিংক এ না জেনে ক্লিক করা। এর মাধ্যমে খুব সহযেই ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে আপনার ডিভাইস।
- আমি কোনো প্রকার এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করি নাই।
অপারেটিং সিস্টেম
অনেক কে বলতে শুনা যায়, পাইরেসী না করে উইন্ডোজ কিনেন। আর তা না করলে লিনাক্স ব্যবহার করেন। আমাদের সবার মাঝেই লিনাক্স ভীতি কাজ করে। যেহেতু আজকের আলোচ্য লিনাক্স না তাই এটা নিয়ে কথা বাড়ালাম না।
আপনি ফ্রি তেই উইন্ডোজ ব্যবহার করতে পারবেন, তও আবার লেটেস্ট ভার্সন টাই। নিচের বিষয় গুলো খেয়াল করুন।
- অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ ব্যবহারের জন্য এখনো অনেক কে দেখি সিডি খুজতে। অনলাইনে পাইরেটেড বা প্রি অ্যাক্টিভেটেড ISO ফাইল খুজতে এবং ইনস্টল দিয়ে ভাইরাসের কবলে পড়তে।
অথচ আপনি চাইলে অফিসিয়ালি এবং ফ্রি তেই জেনুইন উইন্ডোজ ইনস্টলার ফাইল ডাউনলোড করতে পারেন। এজন্য শুধুমাত্র আপনাকে মাইক্রোসফটের একটা টুল ডাউনলোড করতে হবে, সেখান থেকে ISO ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
মাইক্রোসফট লিংকঃ https://www.microsoft.com/en-us/software-download/windows10
- উইন্ডোজ ১১ ISO ফাইল সরাসরি ডাউনলোড করতে পারবেন এই লিংক থেকেঃ https://www.microsoft.com/en-us/software-download/windows11
উইন্ডোজ এক্টিভেট না থাকলে নিচে ডান কোনে ওয়াটার মার্ক থাকে। এটা আপনাকে বিরক্ত না করলে কোনো ইস্যু নাই। আপনি আরামসে ফ্রি তে জেনুইন উইন্ডোজ ব্যবহার করতে থাকুন। কেউ কিছু বলবে না।
- এতো কিছুর পর ও আপনি চাচ্ছেন আপনার উইন্ডোজ যেনো এক্টিভেট থাকে। ওয়াটারমার্ক আপনাকে খুব ডিস্টার্ব করছে… ঠিক আছে, সমস্যা নাই। উইন্ডোজ আপনাকে ১৮০ দিন বা ৬ মাস ফ্রি তে ব্যবহার করতে দেবে। যাস্ট নিচের কোড টা কমান্ড লাইন এডমিন মুড এ চালু করে লিখে এন্টার দিন। ১৮০ দিন বা ৬ মাসের জন্য উইন্ডোজ এক্টিভেট হয়ে যাবে। ৬ মাস পর কি হবে? আপনি এই কোড ব্যবহার করে একই উইন্ডোজে মোট ৬ বার মেয়াদ বাড়াতে পারবন। মানে ৩৬ মাস বা ৩ বছরের লাইসেন্স পেয়ে যাবেন!
- কোডঃ slmgr /ipk <Product key>
সোর্সঃ https://docs.microsoft.com/en-us/windows-server/get-started/kms-client-activation-keys
- কোডঃ slmgr /ipk <Product key>
মাইক্রোসফট অফিস
এখন সবার কাছেই কম বেশী ব্রডব্যান্ড এক্সেস আছে। অফিস ট্রায়াল প্যাক চালানো যায়, উইন্ডোজের মতো করে খুব বেশী দিন ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে বেশ কিছু উপায় আছে। ধরে নিলাম আপনার হাতে পর্যাপ্ত পরিমান ডাটা নেই, আপনি ব্রডব্যান্ড ইউজ করেন না। মোবাইল ডাটা খরচের কারণের গুগল ড্রাইভ বা ওয়ান ড্রাইভ এ কাজ করছেন না। এদিকে মাইক্রোসফট অফিস এর লাইসেন্স কী নাই। না, এখানে পাইরেটেড বা ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন না।
সম্পূর্ণ ফ্রি অল্টারনেট প্রোডাক্ট আছে আপনার জন্য। আপনি চাইলে লিব্রে অফিস ব্যবহার করতে পারবেন। এটা অনেক ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট অফিসের থেকেও পাওয়ারফুল। আর যদি মাইক্রোসফট অফিসের মত লুক চান, তাহলে WPS অফিস আছে ফ্রিতে। ব্যবহার করতে পারেন। আমার পছন্দ লিব্রে অফিস। চাইলে আপনিও ব্যবহার করতে পারেন।
লিব্রে অফিস লিংকঃ https://www.libreoffice.org/download/download-libreoffice
ক্লাউড স্টোরেজঃ
গুগলে একাউন্ট ক্রিয়েট করলে ১৫ জিবি স্টোরেজ ফ্রি পাচ্ছেন। কিন্তু আপনার যদি অনেক বেশী প্রয়োজন হয় তাহলে ফ্রি তে শর্ত ছাড়াই ১ টেরাবাইট (১০২৪ জিবি) নিতে পারবেন টেরাবক্স থেকে। জি মেইল দিয়ে লগিন করে সহযেই একসেস পাবেন। ব্রাউজার বা ডেস্কটপ ভার্শন, সাথে মোবাইল এপ্লিকেশন, ফটোস এর মতো অটো ফটো ব্যাকআপ সুবিধাও পাবেন এতে।
টেরাবক্স লিংকঃ https://www.terabox.com
পিডিএফ রিডারঃ
বর্তমান সময়ে অফিস ডকুমেন্ট এর বাইরে যেটা নিয়ে সবচেয়ে বেশী কাজ করা হয় তা হচ্ছে পিডিএফ (PDF)। কাজ করা বলতে পিডিএফ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু ডকুমেন্ট দেখা বা পড়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। বেশীরভাগ ই আমরা এডোব রিডার ব্যবহার করি। তবে এটা আমার একদম ই পছন্দ না কারণ বার বার ট্রায়াল নটিফিকেশন আসে, প্রায় দেড় থেকে দুই জিবি অহেতুক স্পেস দখল করে থাকে, র্যামের উপর ও প্রেসার দেয় কারণ ছাড়াই। যদি আলাদা কোনো কাজ না থাকে, আমি সাজেস্ট করবো সুমাত্রা পিডিএফ।
কি আগে নাম শুনেন নি এমন কিছু? এটা ফ্রি ও পাওয়ারফুল রিডার। পিডিএফ ছাড়াও আরো বেশ কিছু ফরম্যাট সাপোর্ট করে। সাইজ মাত্র ৫ এম্বি! চাইলে টেস্ট করে দেখতে পারেন।
সুমাত্রা পিডিএফ ডাউনলোড লিংকঃ https://www.sumatrapdfreader.org/download-free-pdf-viewer
পিডিএফ এডীটরঃ
যারা পিডিএফ ফাইল ইডিট করেন, তাদের জন্য ফ্রি তে অল ইন ওয়ান টুল হলো আই লাভ পিডিএফ ওয়েব সাইট। এটা একটা অনলাইন বেজড টুল। খুব কম ই কাজ আছে যেগুলোর জন্য পেইড প্ল্যান আছে। এডিটর হিসেবে ব্যবহারের জন্য সাজেস্ট করার মতো।
লিংকঃ https://www.ilovepdf.com
ভিডিও প্লেয়ারঃ
উইন্ডোজ ১০ বা ১১ এর ডিফল্ট ভিডিও প্লেয়ার খুবই স্লো আর অপশন খুব কম। নিজের জন্য ফ্রি তে ভিএলসি প্লেয়ার ব্যবহার করি। কাস্টমাইজেশন আর প্রচুর সুযোগ সুবিধার কারণে ভালো লাগে।
ভি এল সি প্লেয়ার লিংকঃ https://www.videolan.org/vlc/download-windows.html
ইমেজ ভিউয়ারঃ
আমার মনে হয় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর জন্য সব থেকে বাজে এপ্লিকেশন হলো এর ফটোস। একটা ইমেজে ক্লিক করে অপেক্ষা করতে হয় কখন ওপেন হবে এমন স্লো। ডিফল্ট ফটো ভিউয়ার হিসেবে সাজেস্ট থাকলো ইরফান ভিউ এবং এক্স এন ভিউ। আগে গুগল এর পিকাসা ব্যবহার করতাম। অফিসিয়ালি এই প্রজেক্ট বাদ হবার কারণের আর ব্যবহার করি না।
ইরফান ভিউঃ https://www.irfanview.com
এক্স এন ভিউঃ https://www.xnview.com/en
ইমেজ এডিটরঃ
ইমেজ এডিটর হিসবে ফটোশপ এর বিকল্প অনলাইন ফটোপিয়া। এখানে আপনি পি এস ডি, এ আই, এক্স ডি ফাইল সহ আরো অনেক ফরম্যাট নিয়ে কাজ করতে পারবেন। অফলাইনে ব্যবহারের জন্য গিম্প অনেক পাওয়ারফুল।
ফটোপিয়া লিংকঃ https://www.photopea.com
গিম্প লিংকঃ https://www.gimp.org/downloads
স্ক্রিণ রেকর্ডার ও লাইভ স্ট্রিমঃ
ফ্রি তে একটাই সমাধান, তা হলো ওবিএস। এ নিয়ে বলার কিছুই নাই। অনেক পাওয়ার ফুল একটা ওপেন সোর্স প্রজেক্ট।
ওবিএস প্রজেক্ট লিংকঃ https://obsproject.com/download
ভিডিও এডিটরঃ
ফ্রি তে সবচেয়ে পাওয়ারফুল হলো – দ্যা ভিঞ্চি রেসল্ভ (ব্ল্যাক ম্যাজিক) আর ব্লেন্ডার। ব্লেন্ডার একটি মাল্টি পারপাস টুল। যেমন VFX, ভিডিও এডিটর, সবথেকে বেশী ব্যবহার হয় বোধ হয় থ্রি ডি রেন্ডারিং এর জন্য। আপনার প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া, ক্যামতাসিয়া, ফিল্মোরার অল্টারনেটিভ হিসেবে লাইট ওয়েট প্রোগ্রাম যেমনঃ ওপেন শট, শটকাট ব্যবহার করতে পারেন।
লিংকঃ –
ব্ল্যাক ম্যাজিক – https://www.blackmagicdesign.com/products/davinciresolve
ব্লেন্ডার – https://www.blender.org
ওপেন শট – https://www.openshot.org/download
শট কাট – https://shotcut.org/download
কোড এডিটরঃ
কোড এডিটর মোটামুটি অনেকগুলোই পাবেন ফ্রীতে। যেমনঃ নোটপ্যাড++, সাবলাইম টেক্সট, মাইক্রোসফট এর ভিজুয়াল স্টুডিও কোড সহ অনেক। যেটায় আপনি কাজ করে মজা পান সেটাই ব্যবহার করতে পারেন।
লিংকঃ
নোটপ্যাড++ – https://notepad-plus-plus.org/downloads
সাবলাইম টেক্সট – https://www.sublimetext.com/download
ভিজুয়াল স্টুডিও – https://code.visualstudio.com
ভার্চুয়ালাইজেশনঃ
অনেকেই ভার্চুয়ালাইজের কাজে VMWare ব্যবহার করেন। পারসোনাল ব্যবহারের জন্য VirtualBox গ্রেট। ট্রাই করে দেখতে পারেন।
লিংকঃ https://www.virtualbox.org/wiki/Downloads
সোশ্যাল মিডিয়া ও বেসিক গ্রাফিক্সের জন্য ক্যানভা এর বেসিক ফ্রি প্ল্যান যথেষ্ট বলে মনে করি।
আর কিছু বাকী আছে? একটু খুঁজলেই আমরা অনেক ফ্রি সোর্স পাবো। কার্যবিধি সবারই এক, শুধু হয়তো একটু এদিক সেদিক। টুলসের ব্যবহার জানলে সেটা ম্যানেজ করা সময়ের ব্যপার মাত্র।